(দ্বৈত পাঠের জন্য)
পাঠের সুবিধার জন্য নীচে PDF টি দেওয়া হল। Download করে নিতে পারেন
চয়নিকার ঘর
( প্রেমের সংলাপ -৮)
কিশোর মজুমদার
( চয়নিকার ফোনে রিংটোন বাজার পর , চয়নিকা রিসিভ করবে কিন্তু কথা বলে না )
রুদ্র- হ্যালো ।… হ্যালো ? …হ্যালো……! কথা বলছো না কেন ?
চয়নিকা- (ফিসফিস করে , মুখে পান চিবোতে চিবোতে কথা বলবে) দাঁড়াও… দাঁড়াও আসছি।
রুদ্র- ফোন রিসিভ ক’রে কথা বলছো না !
চয়নিকা- আরে পাগলু । বলছি …বলছি । বোঝো না কেন , ফোনটা রিসিভ করেই এই ঘরে এলাম । বাবা ব্যালকনিতে ইজি চেয়ারে বসে দোল খাচ্ছে। কড়া নজর রাখছে বুঝলে ।
রুদ্র- ও তাই … ? আমি এইদিকে হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছি…যাক বলো । আজকের কাজ সব কমপ্লিট ?
চয়নিকা- কমপ্লিট । তবে …
রুদ্র- তবে কী ? বলো বলো …
চয়নিকা- তবে …
রুদ্র- বলো ? এই , তোমার মুখে কী ? কী খাচ্ছো তুমি ?
চয়নিকা- মায়ের থেকে ইক্টু , এই সামান্য ইকটু পান মুখে দিলাম।
রুদ্র- বাঃ বাঃ বেশ গিন্নি হয়ে উঠছো দেখছি। জর্দা টর্দা খাও না তো আবার ?
চয়নিকা- হ্যালো…দাঁড়াও একটু দরজাটা বন্ধ করে নি।……… শোনো না গো
রুদ্র- কী বলবে বলো…
চয়নিকা- রাগ করো কেন ? আরে , মায়ের মুখে পানের গন্ধটা না খুব ভালো লাগে । তাই আবদার করে নিলাম একটুখানি। sorry , আর খাবো না প্লিজ । হলো…?
রুদ্র- ঠিক আছে ঠিক আছে … কী যেন বলছিলে বলো ।
চয়নিকা- বলছিলাম……যে…
রুদ্র- বলো …
চয়নিকা- আমার না এতো ভিড় ভাট্টা ভালো লাগে না । এমন একটা কিছু চাই…
রুদ্র- কী চাই তোমার। বলো চয়না… বলো শুনি… তোমার কী চাই ?
চয়নিকা- আমাদের একটা ঘর চাই। সুন্দর একটা ঘর।
রুদ্র- বলো বলো । তারপর তারপর ।
চয়নিকা-– ভালোবাসার ঘর । একতলা। তবে ছাদে ওঠার সিঁড়ি থাকবে । ছোট্ট একটা সিঁড়ি। সিঁড়ির পাশে অ্যাকুরিয়াম । দুটো ব্লু জেব্রা ডেনিয়ো (blue zebra danio) ।
রুদ্র- আচ্ছা রেখে দিও। একুরিয়াম শুধু ? পাখি থাকবে না ? ফিঞ্চ বা লাভ বার্ড ? রিংটোনের মত ডাকবে আশে পাশে ।
চয়নিকা- না । বাড়ির সামনে বাগান । গাছের উপর উকি মারবে আকাশ । পাখি উড়বে ওই নীলাকাশে ।
রুদ্র– তাই বুঝি ? সেটাই ভালো হবে ।
চয়নিকা- মাঝে মাঝে জানলায় এসে ঢুঁ মারবে মেঘ । সঙ্গে থাকবে দমকা ঝোড়ো হাওয়া । হাওয়া ঠেলে চোখ খুলেই দেখবো —
রুদ্র– কী দেখবে চোখ খুলে ?
চয়নিকা- দেখবো তুমি আসছো ছুটে । হাতে দুটো হুমায়ুন আহমেদ ।
রুদ্র– বাহ । হিমু সিরিজ বুঝি ?
চয়নিকা- সেটা তুমিই জানো । হন্ত দন্ত.. তুমি ছুটে এসে উঠবে বারান্দায় । মাথার চুলে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি । মুছতে হবে । ছুটে এসে টাওয়াল নিয়ে মুছতে যাবো যেই —
রুদ্র– টাওয়াল কেন ? আঁচল দিয়ে মুছে দেবে তুমি ।
চয়নিকা- আঁচল কোথায় আমার ! সব সময় কি শাড়ি পরে থাকবো ! আজকাল কেউ পরে ? আমি অমন পারবো না গো । আমি অমন মেয়ে নই যে শাড়ি চুড়ি পরে, জানলার গ্রিল ধরে, তাকিয়ে থাকবো পথের দিকে। আমার কত্ত কাজ বলো…
রুদ্র– সেটা জানি আমি । বলো , তারপর কী করবে ?
চয়নিকা--বারান্দার সামনে ঘাসের পথ । পথের প্রান্ত মিলে গেছে দূরে । বাগান জুড়ে বিছানো ঘাসের মাদুর। আর বারান্দাতে —
রুদ্র- আগে মাথাটা ভালো করে মোছো । দাঁড়িয়ে আছি দ্যাখো ।
চয়নিকা- তাইতো । ভুলেই গেছি । তোমার আবার ঠান্ডা লাগার ধাত । এইতো মুছে দিলাম ।
রুদ্র-– ক্যবলার মতন দাঁড়িয়ে থাকবো বুঝি ?
চয়নিকা– ক্যাবলাই তো । তবে বার তিনেক চোখের তারায় চোখ রাখবে বটে। তারপর–
রুদ্র- তারপর ?
চয়নিকা- তারপর ! তারপর আমিও চোখ রাখবো দু’এক বার । তোমার চোখের পাতায় পড়বো আমার সারাদিনের পাঠ ।
রুদ্র- চোখে চোখে কথা হবে বুঝি ?
চয়নিকা- কথা হবে ঠিকই । অল্প তবে । পড়তে হবে বেশি । পড়বো দু-চার পাতা । তুমি আমার সারাজীবন বই । যাকগে ওসব কথা । বারান্দাতে —
রুদ্র- ও হ্যাঁ , বারান্দাতে কী যেন বলছিলে ?
চয়নিকা- বারান্দাতে একটা টি টেবিল , দুটো চেয়ার । পাশে খোলা বই । চশমা খুলে রাখা । ওই শেষের দিকে শূন্য দোলনা দুলবে মৃদু হাওয়ায় ।
রুদ্র– বাহ। বেশ । দোলনা না হয় বুঝলাম । কিন্তু চশমাটা কার ? মাইনাস না প্লাস ?
চয়নিকা- ইয়ার্কি মারছো ? থাক তাহলে বলবো না আর কিছু ।
রুদ্র- sorry , sorry । প্লিজ বলো চয়না । বাধা দেবো না আর ।
চয়নিকা– না থাক । বাদ দাও । ছাড়ো ।
রুদ্র- প্লিজ । শুন্য দোলনা । পাশে খোলা বই । দুটো টেবিল । একটা চেয়ার । এই তো বলো এবার ।
চয়নিকা- দুটো টেবিল ? পাগল । বললাম যে দুটো চেয়ার। একটা টি টেবিল। তোমায় নিয়ে যে কি হবে আমার। ইশ !
রুদ্র– আচ্ছা বলো সোনা । বলো বলো তারপর ?
চয়নিকা- চশমার পাশে কলম । কলমের ক্লিপে আটকে রাখা দুটো একশো টাকার নোট ।
রুদ্র- দুটো একশো টাকার নোট ! তা , টাকাটা কেন রাখা ?
চয়নিকা- বা-রে । বাগানের ওই যে ঘাসের পথ । ওই পথ দিয়েই তো হাসতে হাসতে আসবে টুনুর মা ।
রুদ্র– টুনুর মা ? আসবে ? সে আসুক গে । কিন্তু টাকাটা কেন রাখা ?
চয়নিকা- ও হো — বলিনি তোমায় — না ? টুনুর মায়ের ছোট্ট মেয়েটা — এবার ক্লাস ফাইভে উঠেছে । ওর হাই স্কুলে ভর্তির জন্য টাকাটা দেবো বলেছিলাম।
রুদ্র- খুব ভালো । সমাজসেবা । খু–ব ভালো কাজ । কিন্তু আমাদের মাঝে ওই টুনির মা- টা এল কোত্থেকে ?
চয়নিকা- তুমি তো কাজ পাগলা লোক। রেখে চলে যাও আমায়। দুপুরের নির্জন ঘুঘুর ডাকে কাজ কর্ম গুছিয়ে বসি যখন নিবিড় বারান্দায়। তখন আমার কাছে ও-ই তো আসে, আধঘন্টা গল্প করে যায়। মাঝে মাঝে নদীর পাড় থেকে তুলে আনা কিছু কলমি শাকও দিয়ে যায় ।
রুদ্র- আচ্ছা বলো তাহলে। বারান্দাতেই দাঁড় করিয়ে রাখবে আমায় ? ঘরের ভেতরে নেবে না ? সেই কখন থেকে–
চয়নিকা- হাত ধরে টেনে তোমায় ঘরে এনে দেখাবো । তুমি চমকে উঠবে দেখে।
রুদ্র- ও মা! এ কি কান্ড ?
চয়নিকা- কী হলো আবার ?
রুদ্র- তুমিই না বললে ঘরে ঢুকেই চমকে যাবো আমি ? কিন্তু কীসের চমক বুঝলাম না তো ?
চয়নিকা- আমার ছুটির দিন । তবু তুমি সাত- বারোটা কাজ মাথায় নিয়ে বেরিয়ে গেলে যেই। অমনি আমি ঘর সাজাতে লেগে গেছি। দ্যাখো কেমন সাজালাম আমি। বলো ?
রুদ্র- হম্ খুব সুন্দর। ফুলদানি- ফুল- পেইন্টিং।
চয়নিকা- দূ… র। কিচ্ছু জানে না।
রুদ্র- তুমিই বলো তবে-
চয়নিকা- বিছানার পাশে টেবিল, টেবিল জুড়ে বই শুধু বই।
রুদ্র- এত বই কেন ? ঘরে এত বই থাকলে হয় ?
চয়নিকা- ঠিক আছে। কমিয়ে দিলাম। শুধু তিনটে বই। তোমার প্রিয় শক্তি-সুনীল-জয়।
রুদ্র- আর বাকিগুলো তাকের ওপর তুলে রেখো। লাগবে যখন তখন।
চয়নিকা- ঠিক আছে তাকের ওপর সাদাত হোসেন, শঙ্খ ঘোষ, শ্রীজাত আর লোকাল কবির বই।
রুদ্র- হম্। বুঝলাম।
চয়নিকা- কী বুঝলে ? বলো ?
রুদ্র- এত কিছু রেখেছো ঘরে বারান্দায়। আ্যকুরিয়াম,পাতাবাহার; বনসাই। ইনডোর প্ল্যান্ট। সাজাবে, জল দেবে, যত্ন করবে- আমি তবে কোথায় ? দিনে পড়বে বই, দেখবে বৃষ্টি মেঘ, মনো টুনুর মা। আর রাতে গুনবে তারা, উল্কাপিণ্ড। দুস্ আমি খেলবো না।
চয়নিকা- সবকিছু তো তোমার আমার নিজের। কত সুন্দর সাজানো-গোছানো দ্যাখো।
রুদ্র- ওহে বঙ্গ নারী। তার চেয়ে বলো- তোমার পুজোর ছলে তোমায় ভুলেই গিয়েছি।
চয়নিকা- তুমি না আন-রোম্যান্টিক একটা। এত সুন্দর করে সাজালাম তোমার আমার
ঘর। তাও ভালো লাগলো না।
রুদ্র- তথাস্তু। আসলে বলছিলাম কি, তুমি ভীষণ ব্যস্ত একটা মেয়ে। আমার দিকে দ্যাখো একটু চেয়ে। আদর হবে কখন এতকিছুর পর ?
চয়নিকা- এই তো সবে এইটুকুনই। আর তো সবটা অবসর। কাজ থাকবে কাজের মতো। নদীর দুটি পারের মতো। মধ্যিখানে তোমার আমার জীবন। ভালোবাসায় উঠলে ওঠা ঢেউ।
রুদ্র- আর আমি তোমাকে পড়তে থাকবো সকাল থেকে রাত। তুমি আমার হিমু সিরিজ বই।
চয়নিকা- হা: হা: হা – । আর কবি রুদ্র ? তাকে কে পড়বে ? বলো ? আমি ? না তোমার অগুনতি পাঠিকার দল ?
রুদ্র- আবার পাঠিকা এলো কোথা থেকে ? তুমি না ভীষণ হিংসুটে ।
চয়নিকা- খুব হিংসে হয় জানো। তাইতো ভয় করে খুব। আর তাইতো আটকে বেঁধে রাখবো তোমায়/ নদী হবো বুঝলে সাগর হব অকূল পাথার। তোমাকে ডুবিয়ে রাখবো । (ফিসফিস করে) ডুবিয়ে রাখবো ভালোবাসায় ।
রুদ্র- হ্যালো ? ………হ্যালো ?
চয়নিকা- রাখি। (ফিসফিস করে ) যাই। ওই মা ডাকল। হ্যা মা আসছি…… । হ্যালো ধরো একটু । বাবার প্রেশারের ওষুধটা দিয়েই আসছি।
( পাঁচ সেকেণ্ড পর)
রুদ্র- (হুম…হুম…ক’রে কোনো গানের সুর গাইবে) এলে তুমি ? শুনছো ?
চয়নিকা- হ্যাঁ এলাম বলো রুদ্র। কোথায় যেন ছিলাম আমরা ?
রুদ্র- ওই যে তুমি নদী , সাগর আরো কী কী হবে বললে না ?
চয়নিকা- হবোই তো ।
রুদ্র- শোনো চয়নিকা একটা কথা। তোমার ঘর থাকবে ঘরের মতো। আর তুমি কতটা সাজানো-গোছানো থাকবে — সেটাই বড় কথা। দু’জন পরস্পরকে কতটা সময় দেব, বসে গল্প করবো কবিতা শোনাবো- তুমি গাইবে গান আর………
চয়নিকা- বুঝেছি- বুঝেছি-বুঝেছি। শোনো আমি সাজাবো তোমার লেখার ঘর — বসার জায়গা। আর-……
রুদ্র- আর ?
চয়নিকা- আর তুমি সাজাবে আমায়।
রুদ্র- ঠিক তাই। শাড়ি পরাবো। তুলে আনব ঘাসের ফুল। এনে বানিয়ে দেব কানের দুটো দুল। ইউটিউব দেখে বেঁধে দেবো চুল। তুমি চয়নিকা হয়ে উঠবে আমার কবিতা – আমার পুরো একটা বই। তবেই না জীবনের মজা। বলো- –হ্যালো ?
চয়নিকা- শুনছি তো। কি মজা হবে বলো ? আচ্ছা এখন রাখি রুদ্র ? প’রে আবার আসছি…
রুদ্র- ওকে । রাখি পরে কথা হবে । শোনো , বেশি পান খেও না কিন্তু । পানাসক্তি আমার ভালো লাগে না ।
চয়নিকা- আচ্ছা ঠিক আছে বাবা। পানাসোক্তি … হা হা হা … রাখছি ।
রুদ্র- বাই…বাই…। রাখো…
চয়নিকা- তাহলে রাখলাম।
রুদ্র- রাখো রাখো—উফ -মাথা নষ্ট ।
…………………………
PDF টি Download করুন 👇
"আমিও পারি" কবিতার বই
প্রেমের সংলাপ সিরিজের বাকিগুলো 👇
কিশোর মজুমদারের কবিতার তালিকা👇
- আমিও পারি
- আমিও পারি ২ / (শুধু তোমারই জন্য)
- সম্পর্কের সামিয়ানা – প্রেমের কবিতা
- পরবাসী – আবৃত্তির বাংলা কবিতা
- একটি প্রেমের গপ্পো
- সেই হাত কোথায়
- রাত্রি
- ফাঁকা পকেটে প্রেমের স্বপ্ন
- ফাঙ্ ফাঙা নাগে
- আকাশ ছোঁয়া
- ভালো থাকিস খোকা
- ভোর দেখব বলে
- ঝরা পাতার উত্তর
- মানে
- আলপিনের বাক্স
- একাকীত্বের অংশীদার
- কান্না মেশে দীঘির জলে
- সন্ধ্যাতারা
- হৃদয় ফুলদানি
- তোতন ভূত দেখেছে আজ
- জলের ভাষায় মুখরতা
- জল-কাজলের অক্ষর
- নক্ষত্রের রাতগুলি
- পোড়ো বাড়ি
- মেয়ে-পুতুলের জন্মান্তর
- মা, আমায় আরেকবার জন্ম দাও
- কেন তুই চলে গেলি
- কেমন আছে অপু দুর্গারা ?
- গুগল সব জানে
- প্রণয় গাথা
- মনের মফস্বলে
- সরলরেখায়
- ত্রাণ শিবির
- ভালবাসার মানে অভিধান দেখে শেখা যায় না
- মোবাইল ফোন
- গোলাপ , ছুরি ও বন্দুক
- সাঁকো তলায় জলশব্দ
- তার চেয়ে চলো
- ব্যবধান
- সম্পর্কের সামিয়ানা
- ছাতা
- কোনো শর্ত নিষ্প্রয়োজন
- শিউলি ও শরৎ
- আগমনী
- স্বাধীনতা
- হরনাথের পিসি
- অভিমানী বর্ণমালা
- মেটে শরীরের খোলস
- বায়না
- যে বসন্ত চাইনি কোনোদিন
- তোমার তর্জনি ও আমার কম্পাস
- ডাক
- আহত ঘাসের শেকর
- মোক্তার চাচা
- বৃষ্টি নামার ছলে
- ভারতটা ঠিক কোন দিকে
- Sign Language ও বোবা আমি
- ডানা
- রাইকিশোরী
- কৌণিক কক্ষপথ
- মৃত্যু
- মনজঙ্গল
- বৃক্ষচ্ছায়া
- প্রবেশাধিকার
- গ্রাভিটি
Your Quarries: দ্বৈত আবৃত্তির কবিতা, Duet bengali poem, premer songlap, kishore majumder kobita, abrittir kobita, premer kobita duet, abrittir sera kobita, bangla shrutinatok,