Bengali poetry /সেই হাত কোথায় / কিশোর মজুমদার | Kishore Majumder

Sei hat kothay - Kishore Majumder

সেই হাত কোথায়

কিশোর মজুমদার

মা বুঝি তোকে খুব যত্ন করে
চুল বেঁধে দেয় ?
আদর করে খাইয়ে দেয় , তাই না?
তুই বুঝি খু-উ-ব তৃপ্তি ভরে
লক্ষীছানা হয়ে সব খেয়ে নিস –
আর আদর করে মা বুঝি কপালে চুমু দেয়
দু’হাতে জড়িয়ে বলে – লক্মীছানা আমার,
তাই না ?
আমার তো মা নেই, … যদি থাকতো ….

জানিস, তোদের ছাদে আমার একটা
ঘুরি আটকে আছে
তোর হলদে রঙের ফ্রকটার মতো
বাতাসে দুলতে থাকে রোজ ;
আমার ইচ্ছেগুলোও
ঔ ঘুরিটার মতো
ছুঁতে পারি না –
কিছুতেই পারিনা ।

বাড়িতে তোর অনেক অনেক বই,
অনেক খাতা-কলম-খেলনাও আছে -না ?
এ্যাত্ তো এ্যাত্তো খেলনা -?
জানিস তো আমাদের ওখানে থেকে
তোদের আকাশটা দেখা যায় –
অনেক…ক উঁচু-

আচ্ছা , তুই টাই বাঁধতে পারিস ?
নাকি এট্- টাও মা বেঁধে দেয়?
নিশ্চয়ই দেয়-
জুতো মোজা সব বুঝি মা-ই পরিয়ে দেয় ?
মনে হয় কোনোদিন বাবাও পরিয়ে দেয় তাই না ?
খাটের কোনায় বসে পা দোলাতে দোলাতে
তুই বাবার চুলে ধ’রে থাকিস ,
হাঁটু মুড়ে বসে বাবা জুতোর ফিতে বেঁধে দেয় ।

তোর ইস্কুল ব্যাগে কি সুন্দর কাটুন ছবি ,
আচ্ছা,
ব্যাগের ভিতর কী কী থাকে রে ?
খু-উ-ব দেখতে ইচ্ছে করে ।
টিফিন বাক্স থাকে , খুউব ভালো খাবার থাকে না ?
আমি জানি , টিভিতে অ্যাড দেয়, দেখেছি –
রুটির মধ্যে লাল-কমলা সব মাখিয়ে
গোল গোল পাকিয়ে-
হেব্বি মজা খেতে ।

ইস্কুলে তোর অনেক বন্ধু বুঝি ?
ওয়াও সব্বাই কি সুন্দর জামা টাই
জুতো মোজা পরে । প্রজাপতির মতো
উড়তে থাকে ….
আমারও খুব ইচ্ছে করে …
ইস্কুলে খুব মজা হয় –
গান হয় , খেলা হয় – খুউব মজা ।

তুই বুঝি প্রতি রোববার পার্কে যাস ?
ওরে বাবা ! কি সুন্দর গন্ধ মাইরি –
পাশ কাটিয়ে গেলি আর
রাস্তাটাই খুশবু খুশবু ….. ইস্ ।
ইচ্ছে করে ঔ বড় দোলনাটায় তোকে চড়িয়ে
অ্যায়সা জোড়ে দুলিয়ে দি….
জানিস ছোট্টদের পুকুর পাড়ে খামার
গাছের একটা নিচু ডালে আমার দোলনা
আছে – একদিন যদি দেখাতে পারতাম …
দেখবি কেমন মজা ….
শেকলের ঘ্যারঘ্যার নেই ওখানে ।

আমায় টাই বাঁধা শেখাবি ?
নিজেই বুঝি পারিস না !
না হয় মা-র থেকেই শিখে নিস , তারপরে …
আমি ফুচকা গিট্টু, আধা গিট্টু ,
আড়াই গিট্টু স…বড় জানি ;
খালি ঐ টাই বাঁধার গিট্টুটা কেমন করে দেয় …
একটা কাপড়ের ফালি পেলে ওটাকে
দিয়ে টাই বাঁধা শিখবো –
দেখাবি বল ?

আমার খুব ইচ্ছে করে জানিস ?
তোদের ঐ সাদা সাদা দাগ দেওয়া মাঠে
খু-উ-ব ক’রে দৌড়াই …
ওম্মা কি আদুরে সব তোরা …
বাঁশি শুনে, এইসা মারবি দৌ….ড়
এক্কেবারে লাল ফিতে !
..যদি একবার দৌড়াতে পারতাম !

তোর তো অনেক খেলনা ..
সুন্দর পুতুল, এস্কান্দারের চাক্কা লাগানো
সাইকেল ….
সাঁতার কাটার জামাও আছে ..
ইম্মা …, সেদিন যখন সাঁতার কাটতে
গেলি ! ইস্ ! প্লাস্টিকের তক্তা
ধরেও দাপাতে দাপাতে তিনটা
সিড়িঁও পার হতে পারলি না ..
আমি হলে …..
মাথায় ঔ বেলুন টুপিটা কেন দিস?
ওম্মা বুঝেছি , কানে জল ঢুকবে না
তাই না ? হি .. হি. হি ..

তোর এ্যাত্ত অ্যাতো বই আছে ?
রোজ পড়তে হয় তাই না ?
বাজিল – বেলজিয়াম.. রাশিয়া..
কোয়েশিয়া ..কত্ত দেশ
কত্তো নদী পাহাড় সাগর সব বইতে লেখা থাকে ।

আমি জানি একটা দেশ আছে
কেউ জানে না… শুধু আমি জানি
তোর বইতে ওটা আছে নাকি
খুঁজে দেখিস তো ? তুই পাবি না খুঁজে
যদি বন্ধু হোস্ তবে দেখবো ..
খু-উ-ব সুন্দর একটা দেশ
অনেক অনেক বই ..খাতা
অনেক অনেক খেলনা ..রং পেনসিল
স…ব স…ব বাচ্চাই ইস্কুলে যায়
ব্যাগ কাঁধে আর
টাই পরে …জুতো মোজা পরে দৌড়ায়-
রাস্তা ধরে কেউ প্লাষ্টিক কুড়োয় না ওখানে
সুন্দর সুন্দর টিফিন বাক্সে
কত্ত রঙের কি সব মাখিয়ে গোল পাকানো
রুটি থাকে ..
ঐ দেশটার কথা তোর বইয়ে বুঝি
লেখা আছে ?
ইস্ আমি জানি – নেই ।

আমি জানি
ওখানে মন খারাপ করা মানা
কিছুতেই মন খারাপ করা যাবে না ,
মন খারাপ হলেই তক্ষুনি
আদর ভরা হাত এগিয়ে আসে
চোখের জল মুছে দেয়
আর বলে – ‘কাঁদছো কেন সোনা ?
এই তো আমি আছি ।’

এখানে কোথায় সেই হাত
যে ভেজা চোখের ছাতা হবে !

অনেক.. অনেক….বই-খাতা-পেন্সিল
জামা-জুতো-মোজা-আর টাই
পরিয়ে হাত ধরে ইস্কুলে নিয়ে যাবে
সেই আদর মাখা হাত কোথায় ?
কে জানে –
কোথায় !

About the Author: Kishore Majumder

You might like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share