প্রেমের সংলাপ ৯| রোম্যান্টিক একটা মেয়ে  | Bengali duet poetry | রোমান্টিক প্রেমের সংলাপ PDF সহ

(দ্বৈত পাঠের জন্য)  নিচে PDF link দেওয়া হল

রোম্যান্টিক একটা মেয়ে   

( প্রেমের সংলাপ -৯) 

                                               —– কিশোর মজুমদার

চয়নিকা- তুমি না দিনে দিনে কেমন আন-রোম্যান্টিক হয়ে উঠছো। কেন এমনটা হচ্ছো বোলো তো ? 

রুদ্র-       কোথায় আনরোম্যান্টিক ? কে আনরোম্যান্টিক ?  মানে ? কী হয়েছে বোলো তো তোমার ?   

চয়নিকা-     কী হবে আবার ? তুমি একটাও কবিতা শোনাচ্ছো না সেই কবে থেকে। লাস্ট যে কবে কবিতা শুনিয়েছিলে তাও তো মনে করতে পারবে না ।   

রুদ্র-        ও… এই কথা । কবিতা না শোনালে বুঝি তোমার ভালো লাগে না ? আমি আর ভাবলাম………

চয়নিকা-   কী ভাবলে ? বলো বলো …কী ভাবলে তুমি…?    

রুদ্র-        উফফ…… এত জোরে কেউ চিমটি কাটে ? উফ , তুমি না …

চয়নিকা- তাহলে বোলো কী ভেবেছো আমায় ? দেখো রুদ্র। নতুন কোনো ভাবনা যখন তোমাকে বদলে দেয় তখন সেটা আমাকে অবশ্য জানানো দরকার। বুঝলে ?  

রুদ্র-       তা …… তা তোমাকে তোমাকে জানালে কী হবে ? তুমি … তুমি কী করবে শুনে ?  

চয়নিকা-    ও এই কথা ? আমি কী করবো শুনে ? যাক্‌-গে ছাড়ো ।বলো না কী ভাবলে ? 

রুদ্র-      ভেবেছি মানে উপলব্ধি করেছি। তুমি দিন দিন ক্রমশঃ গিন্নি গিন্নি হয়ে উঠছো।   

চয়নিকা- যেমন- যেমন– 

রুদ্র-   যেমন–  ধরো – রাত জাগবে না , ঠাণ্ডা লাগাবে না, রাতে কখোনো বাইক নিয়ে বেরুবে না, আর…

চয়নিকা- ও এই কথা । তা কী করলে খুশি হবে মিস্টার রুদ্রবাবু ?  রাত জেগে আপনার সঙ্গে চ্যাটিং করে আপনার শরীরের বারোটা বাজাবো…আর আমারো বিপদ ডেকে আনবো ?  আর সকালবেলা ঢুলু ঢুলু চোখে উঠে একগাদা হিসেব নিয়ে বসবো আর চোখে বর্শার ফলার মতো রোদ হানা দেবে আর কাজে হাজারটা ভুল হবে । 

রুদ্র-       কী বললে ? চোখে বর্শার ফলা্র মতো রোদ ? ওয়াও। তুমি কবিতা লেখো না কেন ? 

চয়নিকা-     ইয়ার্কি হচ্ছে ? 

রুদ্র-        তুমিই তো আমার কথা শেষ করতে দিলে না । 

চয়নিকা- ওক্কে ওক্কে। বলো, বলো বলো আমি আর কী কী করি ? 

রুদ্র-  বোঝার চেষ্টা করো প্লি–জ।  

চয়নিকা- (অভিমানে, একটু চুপ থেকে গম্ভীরভাবে) বলো। শুনছি। 

রুদ্র-    রাগ করো কেন ? ভাব তো তুমি আজ কীভাবে শুরু করেছিলে ? কবিতা না শোনানোর অভিযোগ দিয়ে , তাইতো ?   

চয়নিকা-     হ্যাঁ তাই। 

রুদ্র-   তারপর কটা কবিতা শুনতে পারলে ? 

চয়নিকা- কবিতা কোথায় হল ? তুমি তো ঝগড়াই করে গেলে।  

রুদ্র- শোনো আমার সুচয়না। ঝগড়া আমি করি নি । একা একা ঝগড়া হয় না । ঝগড়া না এটা । এটা হল তর্ক। ঝগড়া আর তর্কের মধ্যে তফাৎ হল  ………।

চয়নিকা-  (স্বগত স্বরে) ওই শুরু হয়ে গেল ব্যাস্‌ । 

রুদ্র-  কিছু বললে ? 

চয়নিকা-    এজ্ঞে না । আমার ঘাট হয়েছে মশাই। আমি কবিতা শুনতে চেয়েছি। ওইদিকে busy…. Busy … সময় নেই । হাজার লোককে মঞ্চ ফাটিয়ে কবিতা শোনাবেন। যখনই আমি বলবো যে শুধু আমায় কবিতা শোনাতে হবে … তখুনি তুমি এই , তুমি ওই, তুমি কবি হতে পারো । আসল কথাটা হল কলমের জোরে রোমান্টিক দেখালেও রিয়েল লাইফে তুমি – তুমি একদম আন-রোমান্টিক একটা মানুষ।    

রুদ্র-   ( গম্ভীর স্বরে) একটা মেয়ে –      

চয়নিকা- কি ? 

রুদ্র-  একটা মেয়ে – খুুউ-উ-ব রোমান্টিক। 

চয়নিকা- ( হঠাৎ রেগে ) মেয়ে ? কোন মেয়ে ? কী মেয়ে ? বলো বলো ? 

রুদ্র-       মেয়েটা খুব রোমান্টিক জানো ? 

চয়নিকা-   আগে বলো কোন মেয়ে কই মোবাইল দাও , পিক দেখাও ।  

রুদ্র-    ওহো । ছাড়ো ছাড়ো 

চয়নিকা-    না – আগে দাও মোবাইলটা । দাও। 

রুদ্র-  (রেগে) উফ্‌ থামবে ? 

         (তিন সেকেন্ড নীরব)

চয়নিকা- তাইতো বলি । আমার রুদ্র কেন এত আনমনা । অইদিকে যে ভাবের ঘরে চুরি…… ছবিটা আগে দেখাও । কোন বিশ্ব সুন্দরী , কোন রোমান্টিক মেয়ের প্রেমে পড়েছো দেখি। 

রুদ্র-     প্রেমে পড়ার কথা নয় রে বাবা। বলছিলাম যে একটা মেয়ে খুব রোমান্টিক।   

চয়নিকা-  থামবে না তাড়াতাড়ি বলো।  থামছো কেন ? বলো।  

রুদ্র-    আসলে রোমান্টিক শব্দটার মধ্যেই একটু ধীরতা আছে । ধৈর্য না রাখলে বলব কেন ?    

চয়নিকা- আমার চেয়ে ধৈর্য ? আছে কারো ?  থাক বলো উফ আমি আর পারছি না বলো। 

রুদ্র-  তো কি হল জানো খুব মিস করছি মেয়েটাকে । শিক্ষিতা ,সুন্দরী । কিন্তু কবিতা পাগল। 

চয়নিকা-  নতুন পাঠিকা তো ? আমি – আমি জানতাম । আমি জানতাম এমনটাই হবে । আমার কপাল তো। ও ভাই রে । তোর রুদ্র দাদা দেখ , আর তোর হিরো নেই রে । (কান্না কান্না ভাব) 

রুদ্র-   ধুর্‌ । বলবোই না যাও।      

চয়নিকা-   (হঠাৎ কান্না থামিয়ে ) বলো । থামছো কেন ? বলো। তোমার রোমান্টিক নায়িকার কথা । দাও তো মোবাইলটা … আগে দেখি । 

রুদ্র-        ওহ ছাড়ো ছাড়ো । মোবাইল ফোন টানছো কেন ? 

চয়নিকা- ছাড়ো ছাড়ো বলছি। শুধু দেখেই দিয়ে দেবো। কোন প্রোফাইলে আছে দেখাও । ফেসবুক আইডি দাও। না হয় ইন্সটা তে দেখাও। দেখাও বলছি। 

রুদ্র-       এতো পাগলামি করলে কিছুই বলবো না । একটু শান্ত শিষ্ট লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে যদি বসো তাহলেই বলবো। 

চয়নিকা- ok ok , বসলাম । এই নাও তোমার লক্ষী মেয়ে। 

রুদ্র-       চোখ বন্ধ করো। 

চয়নিকা-  চোখ বন্ধ করবো ? রেখে আবার পালিয়ে যাবে নাকি ! 

রুদ্র-       ওহো এত কথা কেন ?  

চয়নিকা- ঠিক আছে – ঠিক আছে। চোখ বন্ধ করলাম। 

   [ছবি তোলার ক্লিক শব্দ] 

রুদ্র-  এই  এ—-ই , এই নাও চোখ খোলো।  

চয়নিকা- কী ? এ–এ –এতো আমার ছবি। 

রুদ্র-    চোখ বন্ধ করলে তোমায় সে–ই রোমান্টিক লাগে । দেখো। আমি এই রোমান্টিক মেয়েটাকেই মিস করছি।    

চয়নিকা-  ইস্‌ । আমি বুঝি এত রোমান্টিক ? তুমি – তুমি বেশি রোমান্টিক। আচ্ছা একটা কথা । 

রুদ্র-      কী ?   

চয়নিকা- আচ্ছা আমি তো প্রত্যক্ষ তোমার সামনেই আছি। তাহলে মিস করার মানে টা কী ? (রেগে) এই, ঠিক করে বলো তো ? আমাকে মিস করছো মানে ?  

রুদ্র-   বুঝলে না ? 

চয়নিকা- না । 

রুদ্র-      তুমি দারুন রোমান্টিক মেয়ে ছিলে। কবিতা পাগল। চুপটি করে নতুন নতুন কবিতা শুনতে। আর দুজনে আলোচনা করতাম।  আর এখন ?  

চয়নিকা-   এখন ? কী এখন বলো ?    

রুদ্র-        দিনে দিনে ঝগড়ুটে গিন্নি হয়ে উঠছো। কেন এমনতা করো বলো তো ? আমাদের সংলাপ এখন আর রোমান্টিক নেই। হয়ে যাচ্ছে সংসারের কূট কচাল।  

চয়নিকা- আমি ঝগড়ুটে মেয়ে ? … (মারতে থাকে) আমি…আমি ঝগড়ুটে… 

রুদ্র-     উফ লাগছে লাগছে । 

চয়নিকা- আমি ঝগড়ুটে ? না ? দেখাচ্ছি মজা। দাঁড়াও দেখাই……। 

রুদ্র-       Stop, Stop . 

( চার সেকেণ্ড চুপচাপ/ Sad মিউজিক বাজবে)   

চয়নিকা-  Sorry    

রুদ্র-        কী Sorry ? বলো ? 

চয়নিকা-  ( নিচু স্বরে) আমি খুব বেশি কথা বলি তাই না রুদ্র ? 

রুদ্র-  খুব বেশি না । তবে অল্প বেশি তো বটেই। 

চয়নিকা-     আমি আগে রোমান্টিক ছিলাম । আর এখন আন-রোমান্টিক হয়ে যাচ্ছি তাইতো ?  

রুদ্র-     হ্যাঁ – মানে (আমতা আমতা করে) না – নানা  । ঠিকই আছো ।     

  (তিন সেকেণ্ড নীরব)  

রুদ্র-   তুমি রাগ করলে ? কথা বলো । হঠাৎ আকাশ মেঘে ছেয়ে গেল । ঝড়ের পূর্বাভাস। তুমি না ……… তুমি হঠাৎ চুপসে গেলে আর বেশি খারাপ লাগে । খারাপ মানে বেশি ভয় হয় আমার । কী হল তোমার চয়নিকা ? বলো চয়না ? (শান্ত স্বরে ) চয়নিকা – চয়না ?    

চয়নিকা-   (আবৃত্তি করে)  এ পার থেকে তুমি ডাকলে কাছে / ও পার থেকে আমার উথাল পাথাল / সকাল থেকে মেঘলা মুখর আকাশ / মন মাঝিটার নৌকা বেসামাল।                   

রুদ্র-  চয়নিকা–        

চয়নিকা-  হারিয়ে গেছি হারিয়ে যেতে দাও / শুকনো বালির পদচিহ্নে বাঁচি / পাশ ফেরালেই হাতটি ধরে নিও  / বলবে তুমি- এই তো আমি আছি। 

রুদ্র-  wow . How romantic ! বলো। 

চয়নিকা-  (কান্না কান্না গলায়) যখন আমি সরতে থাকবো দূরে / আকাশ-নীলের অভিমানে ছুটে / ভালোবাসবো সকল ভেঙ্গে-চুরে / হৃৎপাথরে মরব মাথা কুটে।  

রুদ্র-        এ কি অভিমান । বলো ? 

চয়নিকা- অনেকটা পথ পেরিয়ে চলে গেছি / ফিরে চাইবো ফেরার সময় কই / বললে না তো – এই তো আমি আছি ? / গাছে উঠবার তুমিই ছিলে মই।      

রুদ্র-  আমি আছি চয়নিকা । এই তো আমি আছি। 

চয়নিকা- এবার যদি ঘাড় ফিরিয়ে দেখি /দেখি যদি তোমার হাতটি পাশে / নীরস বালির মাঝেই ভালোবাসা /মরুদ্যানের মতোই বেঁচে আছে । 

(কান্না | উঠে চলে যায়)  

রুদ্র-  চয়নিকা কাঁদছো কেন ? চয়নিকা যেও না । প্লিজ। শোনো। তুমিই আমার সেই রোমান্টিক মেয়েটি। সেই প্রথম দিনের মতোই আছো । চয়নিকা তুমিই সেই রোমান্টিক মেয়ে। শোনো চয়নিকা — চয়না —আমার সু-চয়না দাঁড়াও ।(ডাকতে থাকে)।  

                                        (রোমান্টিক মিউজিক) 

 …………………………

PDF টি ডাউনলোড করে নিতে পারেন 👇👇👇

               …………………………

কিশো মজুমদারের কবিতার তালিকা 👇
আমিও পারি
আমিও পারি ২ / (শুধু তোমারই জন্য)
সম্পর্কের সামিয়ানা – প্রেমের কবিতা
পরবাসী – আবৃত্তির বাংলা কবিতা
একটি প্রেমের গপ্পো
সেই হাত কোথায়
রাত্রি
ফাঁকা পকেটে প্রেমের স্বপ্ন
ফাঙ্ ফাঙা নাগে
আকাশ ছোঁয়া
ভালো থাকিস খোকা
ভোর দেখব বলে
ঝরা পাতার উত্তর
মানে
আলপিনের বাক্স
একাকীত্বের অংশীদার
কান্না মেশে দীঘির জলে
সন্ধ্যাতারা
হৃদয় ফুলদানি
তোতন ভূত দেখেছে আজ
জলের ভাষায় মুখরতা
জল-কাজলের অক্ষর
নক্ষত্রের রাতগুলি
পোড়ো বাড়ি
মেয়ে-পুতুলের জন্মান্তর
মা, আমায় আরেকবার জন্ম দাও
কেন তুই চলে গেলি
কেমন আছে অপু দুর্গারা ?
গুগল সব জানে
প্রণয় গাথা
মনের মফস্বলে
সরলরেখায়
ত্রাণ শিবির
ভালবাসার মানে অভিধান দেখে শেখা যায় না
মোবাইল ফোন
গোলাপ , ছুরি ও বন্দুক
সাঁকো তলায় জলশব্দ
তার চেয়ে চলো
ব্যবধান
সম্পর্কের সামিয়ানা
ছাতা
কোনো শর্ত নিষ্প্রয়োজন
শিউলি ও শরৎ
আগমনী
স্বাধীনতা
হরনাথের পিসি
অভিমানী বর্ণমালা
মেটে শরীরের খোলস
বায়না
যে বসন্ত চাইনি কোনোদিন
তোমার তর্জনি ও আমার কম্পাস
ডাক
আহত ঘাসের শেকর
মোক্তার চাচা
বৃষ্টি নামার ছলে
ভারতটা ঠিক কোন দিকে
Sign Language ও বোবা আমি
ডানা
রাইকিশোরী
কৌণিক কক্ষপথ
মৃত্যু
মনজঙ্গল
বৃক্ষচ্ছায়া
প্রবেশাধিকার
গ্র্যাভিটি
ভোরের ট্রেন
ওড়না
তোমার তিন প্রহর
গান্ধর্ব
ডাস্টবিন
পুনর্জন্ম
পঞ্চবাণ
হাজার বছরের আড়াল
ফিরে এসো চয়নিকা
প্রেমের সংলাপ – ১  | আগুন 
প্রেমের সংলাপ – ২ | কবি কবি ভাব
প্রেমের সংলাপ – ৩ | মানুষ এত বোকা কেন
প্রেমের সংলাপ – ৪ | পাগলা কবির মুড
প্রেমের সংলাপ -৫   | অন্ধকারের প্রেমিক 
প্রেমের সংলাপ – ৬ | রোদ ও বৃষ্টি
প্রেমের সংলাপ-৭ | শরীর না মন 
প্রেমের সংলাপ-৮ | চয়নিকার ঘর 

About the Author: Kishore Majumder

You might like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share