অন্ধকারের প্রেমিক | কিশোর মজুমদার |দ্বৈত আবৃত্তির কবিতা|Abrittir premer kobita

প্রেমের সংলাপ – ৫

অন্ধকারের প্রেমিক

চয়নিকা : তুমি রোজ কটায় ঘুমাও বলো তো ?
রুদ্র : কটায় হবে ? এই আর কি 2টা 4টা হবে ।
চয়নিকা : 2টো না 4 টে ?
রুদ্র : নিশাচর বলতে যা বোঝায় , ঠিক তা নয় ।
চয়নিকা : মশাই , 2টো 4টে মনে নিশাচরই হল ।
আচ্ছা , এত রাত জেগে করোটা কী বলোতো ?
কবিতা লেখো ? সেই 12টা না বাজতেই তো offline হয়ে যাও ।
রুদ্র : হুম….. কী করি শুনবে ?
চয়নিকা : বলো ।
রুদ্র : ছাদে গিয়ে পায়চারি করি । আর
চয়নিকা : আর ?
রুদ্র : আর আকাশের তারাদের সাথে মিতালি করি , দমকা হওয়ার সাথে গোল্লাছুট খেলি , বন্ধু নীরবতার সাথে প্রেমের গল্প করি । অন্ধকারের সঙ্গে ……
চয়নিকা : অন্ধকারের সঙ্গে ?
রুদ্র : আমার চিরন্তন প্রেম । অন্ধকারই আমার আলোর সহযাত্রী ।
চয়নিকা : তাই বুঝি ? আচ্ছা বলো তো কবিরা তো নিশাচর হয়েই থাকে , সে আর এমন কথা কি ? ফুল পাখি চাঁদ তারা গান তো বাঙালির প্রেমিক হৃদয়ের অলংকার ।
রুদ্র : সবার জন্য নয় চয়নিকা ।
চয়নিকা : মানে ? তুমি বুঝি চাঁদ ভালোবাসো না ? জ্যোৎস্না , সে তো কবির হৃদয়ের বীণার তারের tune ।
রুদ্র : না ।
চয়নিকা : কি না ? জ্যোৎস্না রাত তোমার ভালো লাগে না বুঝি ?
রুদ্র : না ।
চয়নিকা : কেন কেন ? তুমি এত আলাদা কেন ?
রুদ্র : দেখ , মানুষের ওই এক দোষ । কবি মানে খোঁচা দাড়ি , কাঁধে ঝোলা , পাজামা আর পাঞ্জাবি পরা আলাভোলা লোক হবে । আর ফুল পাখি চাঁদ তারা নিয়ে কারবার ।
চয়নিকা : তো কি তাইতো হবে ।
রুদ্র : না । কবিরা এখন জিন্স পরে , পার্টি করে , মঞ্চ কাঁপিয়ে মোটিভেসোনাল স্পিচ দেয় , ফুল পাখি ছেড়ে মানুষকে ধরে , ব্লগ লেখে , car drive করে ফেমিলি ট্যুর এ যায় । বুঝলে ? কবি হয় হৃদয়ে —– বাইরের লোক দেখানো ভাবসাবে নয় বুঝলে ?
চয়নিকা : বাহ , দারুন বললে তো । দাঁড়াও এবার কলেজে সোশ্যাল এ তোমায় একটা লম্বা স্পিচ দেওয়াবো ।
রুদ্র : আমার বয়েই গেল তাতে । আমি যা ভালোবাসি তাই তো করবো ।
চয়নিকা : এই না বললে কবিরা মোটিভেসোনাল স্পিচ ও দেয় ।
রুদ্র : তো আমি কেন ? যারা দেবার দেয় ।
চয়নিকা : ছাড়ো না ওসব কথা । আগে বলো এত সুন্দর জ্যোৎস্না তোমার কেন ভালোলাগে না ?
রুদ্র : স্বীকারোক্তি চাইছো ? না কি আবার আমার ইন্টারভিউ নেবে ?
চয়নিকা : হুম … দুটোই । বলো না প্লিজ । মেঘের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা জ্যোৎস্না ভরা পূর্ণিমার চাঁদ তোমার ভালো লাগে না কেন ?
রুদ্র : আসলে কি জানো ? আমি অন্ধকারকে ভীষণ ভালোবাসি । কেননা , সেই তো সমস্ত রূপ-রস-গন্ধের উর্ধে আমার সত্যিকারের সত্তাটিকে কলমের সামনে এনে দেয় । সাদা পাতার কাছে আত্ম সমর্পণ করতে বলে আমার সমস্ত অহমিকাকে ।
চয়নিকা : বাহ ! ফ্যান্টাস্টিক । বলো বলো আর ?
রুদ্র : ঠাট্টা করছো ? যাও, বলবো না কিছু আর ।
চয়নিকা : এই –না–না– প্লিজ না , ঠাট্টা নয় । তুমি বলো । একটু মজা করলাম জাস্ট । বলো না , কি হলো তোমার ভালোবাসার সে অন্ধকারের ?
রুদ্র : শোনো , আর ওই জ্যোৎস্না ভরা চাঁদ অন্ধকারের বুক চিরে মানুষের ভালোলাগার রূপটিকেই সামনে এনে দেয় । —-ওই যে রূপ–রস– গন্ধ–স্পর্শের জগতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নিজেরই চোখের খামে সবকিছু বন্দি করে ফেলে ।
চয়নিকা : তাই ?
রুদ্র : হা তাই । রুপোলি আলোর মায়ায় মোহময়ী আরেকটি রূপ এনে দেয় সামনে — আর নিজের সঙ্গে দেখা করাই হয়ে ওঠে না ।
চয়নিকা : হুম , বুঝেছি । কি আর করা । যাক গে । তবে একটা কথা বলে দিচ্ছি , তোমার ঐ অন্ধকারকে আমি কিন্তু আমার ঘরে ঠাঁই দেব না , বুঝলে মশাই ?
রুদ্র : তোমার হাসির আলোয় ভালোবাসার প্রদীপের রোশনাই আমার অন্ধকারকে ঠেলে দূর করে দেবে না ?
চয়নিকা : কোথায় ?
রুদ্র : কোথায় আবার ; ঝাড় জঙ্গল বনে বাদারে ।
চয়নিকা : আর আমি ?
রুদ্র : তুমি ? তুমি যে আমার চয়নিকা ,আমার চয়না — সুউউ–চয়না , আজীবন আমি তোমার ভালোবাসার ফুল চয়ন করতে করতেই একটার পর একটা প্রদীপ জ্বেলে যাবো তোমার ঘরের প্রতিটি আনাচে কানাচে ।
চয়নিকা : দারুন —দারুন । একটা কবিতা শোনাবে আজ ?
রুদ্র : না চয়না , আজ থাক । পরে হবে খন ।
চয়নিকা : কি আর করা — অন্ধকারের প্রেমিক ।
রুদ্র : কি বললে ? তোমার তবে কি ? বলো আমি তোমার তবে কে ? বলো ।
চয়নিকা : কানে কানে বলি এসো ….. কানে … কানে ….

“আমিও পারি” কবিতার বইটি সংগ্রহ করতে পারেন অনলাইনে । কাব্যটির ভূমিকা লিখেছেন কবি শ্রীজাত।

“আমিও পারি” কবিতার বইটি সংগ্রহ করতে পারেন অনলাইনে । কাব্যটির ভূমিকা লিখেছেন কবি শ্রীজাত।



কিশোর মজুমদারের কবিতার তালিকা👇

About the Author: Kishore Majumder

You might like

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share