পোড়ো বাড়ি
সুবিশাল বাড়িটার ভেতরে
আজ আর কোনো মানুষ থাকে না
তুমি আর আমি হাত ধ’রে আজ
ওই বাড়িতেই যাবো ;
পলেস্তরা খসে যাওয়া দেয়াল
ঝুল কালিতে গুমোট অন্ধকার আনাচ কানাচ থেকে
নীরবতা ভঙ্গের বাদুড় ডানার ঝাপট —
গত জন্মের থেকে উঠে আসা ভয়ে
আদ্দিকালের শৈশব চিকচিক চোখের আলোয়
গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাবো দু’জন ;
তুমি শক্ত ক’রে ধ’রে থাকবে আমার শঙ্কাহারী হাত
তোমার ঘন চুলের শ্বাসে চুপসে থাকবে শীতলতা ,
ভয় পেওনা চয়নিকা —
আমার পুরুষালি কাঁধ ঘেষে থাকবে তুমি
দু’হাতে শক্ত ক’রে ধরে থাকবে আমার হাত ;
এভাবেই এগুতে থাকবো দু’জন
রক্তচোষা ভয়ঙ্কর বাদুড়
আর চুড়েলের আবিলতা উপেক্ষা না করেই
আমরা এগুতে থাকবো ;
পোড়ো বাড়িটা —
জানালায় দাঙ্গার রক্ত
দরজায় অশ্রুর নিশিযাপন
মেঝেতে মেঝেতে ধুলোর বিষাক্ত বেদনা
অনুভব করতে করতে
একটার পর একটা চৌকাঠ করিডোর পেরোতে থাকবো
তুমি ভয় পেওনা চয়নিকা —
কারণ আমরাই আজন্ম প্রেম
আমরাই মৈত্রীর লেফাফা
ভালোবাসার সবুজ ঘাসের ছোপ ।
এভাবেই নতুন করে বেঁচে উঠতে হবে আমাদের ,
নতুন জন্মের মুখরিত কোলাহলে
মরা বাড়িটার বন্ধ্যা কক্ষে কক্ষে
বপন করতে থাকবো
তোমার আঁচলে লুকোনো ঘাসের বীজ আর বটের ফল ,
বহুদিন পর রক্তের স্মৃতি নিয়ে মরতে থাকা বাড়িটার
দেয়াল ভেঙে ফেলবে মহীরুহের শেকড়-ঝুরি-ডালপালা ,
ঘাসের পর ঘাস এসে মুছে দেবে
হিংসার কালো নিষ্ঠুরতার ছাপ ।
তখন তুমি আর আমি
এখানেই এসে বসবো আবার ,
চারদিকে তাকিয়ে দেখবো
সবুজ ঘাস আর শীতল ছায়ায় ঘেরা সুন্দর একটা দেশ ।
যেখানে পাখি গান গায়
আকাশে মেঘের আলপনা মেখে
ছায়া হয়ে ছড়িয়ে থাকে — সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা
ভালোবাসা ।
আমরা দু’জন শুয়ে থাকবো সেখানে
অনন্তকাল ।
########