
পেহেলগাও : এক রক্তগাথা
কিশোর মজুমদার
সবুজ ভোর তখন থমকে দাঁড়িয়েছে পাহাড়ের কোলে,
কেউ জানে না—সময়ের গায়ে লুকিয়ে আছে আগ্নেয় পরাজয়।
নিঃশব্দে ফেটে পড়ল এক ইতিহাস,
রক্ত ছিটিয়ে দিল দেশের মানচিত্রে।
এ মৃত্যু শুধুই না-ফেরা নয়,
এ এক উত্তাল ডাক, এক শপথ—
দেশের হয়ে যারা মরে,
তারা আসলে অমর হয়।
তাদের অকালে ঝরে পড়া রক্ত
কি ব্যর্থ হবে ?
পারবে না হতে –
জাতির শিক্ষার এক হাতিয়ার ?
হিংসার এই দুনিয়ায় ভালোবাসা নাকি বিপ্লব!
কিন্তু আমরা মনে করতে পারছি না
কবে কোন বন্দুকের নল ভালোবাসায় গোলাপ হয়ে ফুটেছে !
স্বাধীন দেশের নিরীহ তাজা স্নেহ-রক্ত দেশের কপাল ফেটে গড়িয়ে পড়ে যখন –
তখন কি প্রশ্ন জাগবে না ?
ধর্ম তুমি কার?
স্বাধীনতা তুমি কতটা কেতাবি ?
ভালোবাসা, স্বাধীনতা, ধর্ম-নিরপেক্ষতার রাজনৈতিক গালফোলা ভাষণ কেন অন্ধ হয়ে যাচ্ছে না সভ্যতার লম্পট বন্দুকের সামনে ?
হে দেশ তোমার মাথা ফাটিয়ে চলে যাবে –
কথা বলে যাবে উল্লুকের জেহাদি বন্দুক ?
আর ভালোমানুষীর নির্বোধতায় বসে বসে আঙ্গুল চুষবে শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি ?
ফুটেজ খাওয়া পাবলিক হয়ে
চুপ করে থাকার দায়ভার নেবে কে ?
সেই প্রেমিকার শূন্য হৃদয়ে কি কোনদিনও আর ফুটবে গোলাপ ?
আজ তুমি সৈনিক শহীদের পুলওয়ামা যদি শিল্প না দেয় –
যদি রুখে দাঁড়ানোর মেরুদণ্ড ভেঙে খানখান হয়ে যায়
তবে দেশ তুমি জনতার
হবে কবে ?
নিরাপত্তার বেষ্টনীতে ড্রইংরুমে শুধু খবর হয়েই নীরব ইতিহাস লিখতেই থাকবে ভারতের অপমান আর
নতুন নতুন হাজারো রক্তগাথা ।
ওঠো ভারতবাসী –
জাগো ভারতবাসী –
এবার তো চোখ খোলো
সারা দেশটা পহেলগাও হয়ে ওঠার আগে একবার তো বলে যাও —
আমরা রক্তপাত চাই না-
আমরা ধর্মের জিগির শুনতে চাই না-
চাই শুধু নিজের দেশে
নিজের মতো করে ভালবাসার ফুল ফোটানোর অধিকার।
গর্জে ওঠার সময়ও যদি হেডফোনে হৃদয় বিনোদিত করতে থাকি আমরা–
তবে তো একদিন বন্ধুকের নল কেড়ে নিতে আসবেই শেষ বিন্দু-রক্ত – স্বদেশ !
এবারও কি বলার সময় হয়নি—
আমরা বদলা চাই-
হ্যাঁ বদলাই চাই ।
গোলাপ নয়- কামান চাই
বুলি নয়- বোমা চাই-
তবেই তো আমার দেশ সত্যি কারের আমার হবে-
ভালোবাসার ভারত,
লিখতে পারবে রক্তের অক্ষরে রঙিন গোলাপ আর সাদা পায়রার নামাবলি ।
এ মৃত্যু শুধুই না-ফেরা নয়,
এ এক উত্তাল ডাক, এক শপথ—
দেশের হয়ে যারা মরে,
তারা আসলে রক্তাক্ত বিপ্লবের জন্ম দিতে চায় ।
=========