তোতন ভূত দেখেছে আজ
কিশোর মজুমদার
তোতনের আজ খুব জ্বর
মা- বাবা -দাদু -দিদা -ঠাম্মা
সবাই বাড়িশুদ্ধ মন খারাপ করে বসে আছে ।
—–ঠাম্মা , আমায় একটা গল্প বলবে ?
—–ও দিদুন একটা কাহিনী শোনাও না ।
সবাই এ ওর মুখের দিকে চায় আর বলে
—-হ্যাঁ গল্প-কাহিনী-গান সব হবে
তুমি আগে সুস্থ হয়ে ওঠো ।
তোতনের 103 জ্বর ।
মা-বাবা কারো মুখেই খাবার রোচে নি সারাদিন ।
ওষুধ-ডাক্তার-জলপট্টি চলতে থাকে দিনভর ।
সন্ধ্যে হয়ে আসে ।
এক সময় জ্বর নামতে থাকে জ্বর নামতে থাকে
আর তোতন ঘামতে থাকে ।
দাদু দিদার মুখে হাসি ফোটে
ঠাম্মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে
মা , বাবার মুখের দিকে তাকায়।
তোতন ঘামতে থাকে
আর জ্বর নামতে থাকে।
দুচোখ জলে ঝাপসা হতে থাকে
ঝুঁকে পড়া মুখগুলো অচেনা মনে হয় তোতনের ।
চোখের জলের ঝাপসায়
হাসি ফুটতে থাকা চেনা মুখগুলো দূরে সরতে থাকে….
তোতন চোখ বুঁজে ফেলে
দু ফোটা জল গড়ায় কচি দুটি গাল বেয়ে ।
তোতন দেখতে পায়
পাঁচশো কেজি ওজনের একটা ব্যাগ তার পিঠে
ওজন বইতে না পেরে সে ঝুঁকে পড়ে
এক সময় চাপা পড়ে যায় সেই বই-ঠাসা ব্যাগের তলায়
হাত বাড়িয়ে চিৎকার করে….
তোতনের জিভ বেরিয়ে আসে ।
চিৎকারে চিৎকারে ক্লান্ত তোতন দেখতে পায়
কিছু চেনা মুখ এগিয়ে আসছে তার দিকে
বাঁচাও—- বাঁচাও—– বাঁচাও—-
তোতনের কোমল গলার চিৎকার কারো কানে পৌঁছোয় না ।
ব্যাগের চাপা-পড়া থেকেই ঘাড় তুলে ওঠার চেষ্টা করতে
থাকে ।
চেষ্টা করতে করতেই আর্ট স্যার তার পিঠে ঢেলে দিল
এক লক্ষ রং পেন্সিল আর আর্ট খাতা
হাপাচ্ছে তোতন
তবলার স্যার তার উপর দিয়ে গেল
দোতলা বাড়ির মত উঁচু এক জোড়া তবলা ডুগি
একে একে গানের ম্যাম , তিনজন প্রাইভেট টিউটর
সাঁতারের স্যার দুজন আর ক্যারাটে প্রশিক্ষক
সিনিয়র দাদারা
একে একে সবাই তোতনের পিঠের উপর ঢালতে লাগল
বিশাল বিশাল হোর্ডিং
আর সে গুলির কোনটায় লেখা এইচ ডব্লিউ
কোনটায় লেখা এটা করবে , ওটা করবেনা-র
বিশাল বিশাল অক্ষরের রং মশাল ।
তোতন চিৎকার ক’রে ডাকে
—-মা-বাবা –ঠাম্মা-দাদু-দিদুন
—বাঁচাও —–বাঁচাও—- বাঁচাও —-
এবার মা এলো বাবাও এলো
দাদু-দিদা-ঠাম্মা সবাই এল ।
তোতন হাফ ছেড়ে বাঁচার কথা ভাবতে ভাবতেই
সবাই একে একে ওর পিঠের উপর দিতে লাগল
বড় বড় এক একটা বস্তা —
—লাল— নীল —সবুজ — রঙ বেরঙের স্বপ্ন ভরা । তোতনের চিৎকারে সকলেই চমকে যায়
—-কি হলো –কি হলো —তোতোন— তোতন–––
বোধ হয় ভূত দেখেছে তোতন ।
হ্যাঁ , সত্যি আজ ভুত দেখেছে তোতন ।
##########