কিশোর মজুমদারের কবিতা
সন্ধ্যাতারা
আমি যখন রোজ নদীর ধারে বসে
সূর্যাস্ত দেখি
হয়তো তুমি তখন সায়াহ্নের প্রদীপ জ্বালো
পরনে ঢাকাই শাড়ি , কপালে সিঁদুর ।
কিংবা মিডিস্কার্ট পরা তুমি টিপে দাও দোতলার প্রতিটি সুইচ
আমি নীরবে মাথানীচু করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলি
আমি ভালোবাসি সাধারণ মানুষকে
সবকিছু থেকে যারা বঞ্চিত
সেইসব মানুষের জন্য আন্দোলন করতে
ভালোবাসি রাতের ঝড়ের পর স্নিগ্ধ সকালকে
আর ভালোবাসি
তোমাকে ।
সমস্ত ব্যস্ততার মাঝেও এতটুকু অবসর রাখি
শুধু তোমার জন্য ।
তুমি আমার আন্দোলনের ভাষা
বিপ্লবের শানিত তরবারির ঝংকার
আমার নিঃসঙ্গ পথচলার পদশব্দের পাশে
একাকিনী নদীটির কলকল ধ্বনির মতোই ….
আমি যখন একটুকরো পোড়া রুটির গন্ধে
একটা আস্বাদ্য ঢেকুর তুলি মনের অজান্তে
হয়তো তুমি তখন কিচেনে বসে রাঁধ চিলি চিকেন
নতুবা তেমনি কোনো রাজভোগ
আমি তখনও পোড়া রুটির স্বপ্নের মাঝে
খুঁজে চলি এক দুর্লভ বাস্তবকে ।
যখন আমি গাছের তলায় বসে
চাষীদের বীজ বোনা দেখি
কিংবা দেখি অর্ধ উলঙ্গ নেংটি পরা মানুষ
কীভাবে রোদ বৃষ্টি ঝড় জলের বেড়া
অতিক্রম করে একটা জীবনের অস্তিস্ত্ব খুঁজতে থাকে
হয়তো তুমি তখন
সোফায় বসে হোম থিয়েটারে গান শোনো
কিংবা ম্যাগাজিন হাতে অপেক্ষা করো কারো জন্য
কখনো বা সুর তোলো কোনো হিন্দি গানের কলি….
তুমি হয়তো জানো না এই গাছ আমায় কত ভালোবাসে
কত ভালোবাসে রাতের ঝিঁ ঝিঁ পোকা
বস্তির ভুখা মানুষগুলো
আর ওই তারায় ভরা আকাশটা ……
যখন সন্ধ্যা রাতে শুনি
শালবনের দূর থেকে ভেসে আসা বাঁশির সুর
আর ভাবি ঐতো তুমি আছো
ঝরে পড়ছো আজো সুরের মুর্ছনাতে
হয়তো তুমি তখন নিমন্ত্রিত কোনো সান্ধ্য চায়ে
কিংবা কোনো বিশেষ মিসেস এর পার্টিতে ।
যখন হয়তো আমি আধ-থালা বাসি ভাতের মাঝে
একটা কাঁচা লঙ্কা ঘসি
উন্মুক্ত উদার প্রকৃতির কোলে
ছোট্ট পোড়ো চাতালে বসে ..
ঠিক তখনই হয়তো তুমি ছুড়ে দাও পাঁচ টাকার কয়েন
নিচতলার বারান্দায় অপেক্ষারত জীর্ণ ক্ষুধার্থ ভিক্ষুকটাকে
কিংবা রামুকে দিয়ে পাঠিয়ে দাও
গতরাতের বাসি কিছু খাবার
তুমি কি ওদের সত্যি চেনো ?
যাদের রক্তে ঘামে গড়ে উঠেছে তোমার মজবুত ইমারত ?
আমি …. আজ আমি তো তাদেরই একজন
আমি সুখী —– তুমি সুখে আছ তাই
আমি দুঃখী — আমার সহস্র জনতার দিনরাত দুঃখে কাটে
আমি যখন হিসেব কষতে চেষ্টা করি
কটা ঝরাপাতা উড়ে গেল বাতাসে
পেছনের ছায়াটাকে দেখে আনমনে বলে উঠি
এইতো তুমি আছো ।
যখন মনে মনে প্রতিজ্ঞা করি
আমার প্রতিটি অশ্রু রক্ত ঘাম দিয়ে গড়ে তোলা
ভালোবাসার রক্ত গোলাপ
তোমাকেই দিয়ে যাবো শেষ উপহার ।
আর আমি নেব ওইসব মানুষের কান্না
আর হাহাকার
তখন হয়তো বা তুমি ডুবে থাকো
গভীর আনন্দের মাঝখানে
ঠিক যেমনটি দিনের আলোয় ডুবে থাকে
সন্ধ্যতারা ।
#####$$$#####