
মা বলেছিলো মাস্টার হবো
— কিশোর মজুমদার
মা বলেছিলো মাস্টার হবো…
মায়ের স্বপ্ন বিশ্বাসে বদলাতে সময় লাগেনি।
মায়ের বিশ্বাস ভালো মাস্টার নাকি বটগাছের মতো,
তার কত ডালপালা, ছায়া হয়, শান্তি দেয়।
কত জীব, প্রাণী ,পরগাছা আশ্রয় নিয়ে বাঁচে সেই বট গাছে।
মা বলেছিলো তুই সত্যিই মাস্টার হবি…
দারিদ্র ভুলে, যন্ত্রনা ভুলে ওই লন্ঠনের আলোয় মায়ের দেখা মুখ ,
সোনায় বাঁধানো হীরে ।
আমি মাস্টার হয়েছি। বটগাছ হতে পারিনি বটে।
হাজার হাজার চারাগাছের ভেতর পুঁতে দিয়ে যাচ্ছি মহীরুহের সম্ভাবনা ;
যাতে দেহাতি মা-গুলো নতুন করে বলতে পারে,
— বাবা তুই মাস্টার হবি,
— মারে তুই ম্যাডাম হবি।
মা তোমার লন্ঠনটা খুঁজে পাচ্ছিনা আজ —
যার আলো জানলার ফাঁকে রাস্তায় এসে পড়তো,
তবু চিনে নিতে অসুবিধা হতো না আমার ফেরার পথ।
খুঁজে দাও, খুঁজে দাও আমার শয্যাশায়ী মা
খুঁজে দাও তোমার সেই লন্ঠন,
যার আলোয় আমি সব দেখতে পেতাম –
বইয়ের সব লেখা – আমার ভবিষ্যৎ — তোমার স্বপ্ন —সব… সব… সব—
চাকরি পেয়েছি, মাস্টারি।
তোমার ঘরে ইলেকট্রিক আলো জ্বলছে মা।
কুড়ি ওয়াটের আলোর মধ্যেও মা কিছু দেখতে পাচ্ছি না কেন ?
তোমার ওষুধ কেনার টাকাগুলো আলাদা করে রাখতাম এক তারিখেই,
সেই বাক্সটা কোথায়?
সামনের মাস থেকে ইলেকট্রিক লাইনও থাকবে না।
তখন মায়ের লণ্ঠনটা জ্বালবো আবার। মা।
মা বলেছিলো মাস্টার হবো।
মা বলেছিলো সম্মান পাবো।
আজকে অসম্মানের ভিড়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলছি –
সম্মান ও শক্তি ক্রমশ গড়িয়ে পড়ছে রাস্তায়– ফুটপাতে– মিছিলে– অবস্থানে –
মা, তুমি তো সব জানো…
একবার হাত রাখো মাথায়,
আর বলে দাও – বলে দাও কবে নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাতে পারবো,
খুশি মনে ফুলের মত ভবিষ্যৎগুলোকে আদর করে বলতে পারবো –শেখাতে পারবো–
মানবিকতার পাঠ।
অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ না করেও কেন আড় চোখের চাহনি সইতে হচ্ছে ?
ফুটেজ হয়ে বাঁচতে চাইনা মা —
ফুটেজ হয়ে বাঁচতে চাই না —-
মা বলেছিলো মাস্টার হবো।
………………………………