কিশোর মজুমদার
পুকুরের বড়ো বড়ো মাছ, আর খেতের ধান,
পুঁই, পালং বেগুন আলু লাউ চাল-কুমড়ো
আর এই তিন তিন বিঘার ভিটেবাড়ি
আমি মারা গেলে কী করবি খোকা ?
যেতে চাস যা _ লেখাপড়া করে মানুষ হয়েছিস
তোকে আটকানোর কি আছে ?
যা গিয়ে শহরে থাক
চাকরি বাকরি বাড়ি ঘর বউমা নাতি
সবকিছু নিয়ে সুখে থাকিস বাবা।
তোকে একটা কথা বলবো খোকা ,
আমি না থাকলে.. আমি না থাকলে
তোর মাকে কিন্তু দেখিস
হার্টের অসুখ তো , ওষুধ চলছে_
খবর দিলে চলে আসিস
ওষুধ শেষ হলে এনে দিস বাবা।
তোর একমাত্র বোন _ ওর দিন ভালো চলে না
ওর একটু খবর করিস,
আর ছুটি পেলে
এখানে এসে দিন কয়েক থেকে যাস।
আমি আর তোর মা
এই ভিটে ছেড়ে যেতে পারব না রে
দাদুভাইকে নিয়ে আসিস,
আর দেখিয়ে নিয়ে যাস আমাদের।
জানি তো ওর স্কুল , টিউশন, আর্ট গিটার
অনেক অনেক চাপ _
তবু খুব দেখতে ইচ্ছে করে রে
তোর ছোটোবেলার স্বাভাব সব পেয়েছে ও
খুব আদর করতে ইচ্ছে করে।
তোর মা’র খুব ইচ্ছে ছিলো ওকে নিয়ে মেলায় যাবে
আমি আর কতদিন বল
দেখিস যদি সুযোগ পাস।
এই গ্রামের মানুষজন জমি-জমা -খেত-খামার গরু বাছুর-গাছপালা ছেড়ে _ যেতে পারব না রে –
এখানের মানুষগুলো আমাদের কাছের
আমাদের আপনজন – কিছু একটা হলেই সবাই ছুটে আসে- ওদের ছেড়ে- ওদের ছেড়ে যেতে পারবো না রে –
ভালোভাবে থাকিস,
বউমা _ দাদুভাই ওদের দেখেশুনে রাখিস বাবা
আমাদের দিন কেটে যাবে কোনোমতে,
আর হ্যাঁ, বাইক কিন্তু সাবধানে চালিবি
দাদুভাইয়ের জন্য সখ করে বকনা বাছুর কিনেছিলাম
ওটা সামনের মাসে বাচ্চা দেবে ।
শহরে কেউ গেলে মাঝেমাঝে দুধ পাঠাবো
সোনাইকে খাওয়াবি কিন্তু।
মাঝে মাঝেই ফোন করিস
তোর মা-র সঙ্গে সোনাইয়ের কথা বলিয়ে দিস–
এখানকার মানুষগুলো-
এই গ্রামের মানুষগুলোর অনেক দুঃখ রে
ওদের কান্না আমি শুনতে পারি এই জমি-জমা গাছপালা গুলোরও কান্না শুনতে পাই ।
তোর ছেলেবেলা শৈশব জড়ানো ওদেরই কোলে পিঠে । পুকুর ধারে বাঁশঝাড়ের ছায়ায় বসে বসে
এই সব ভাবতে ভাবতে দিন কেটে যায়
ছাড়, বাবা – তুই যা –
আর শোন – খুব সাবধানে থাকবি
আমি আছি
আমি তোর মাকে নিয়ে আছি
আর তিন তিন বিঘার ভিটাবাড়ি
ভীষন ফাঁকা ফাঁকা লাগে রে
খুব খালি খালি লাগে ।