
পক্ষপাতী
কমল সরকার
রাহুল গান্ধী শেষমেশ বিয়ে করবেন কি করবেন না
সে বিতর্কে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই।
৭৬টা বই লিখে ডি.লিট পাওয়া মমতা ব্যানার্জী
আরও ১৪৯টা বই লিখে ফেললে নোবেল পাবেন কি না
সে প্রশ্ন আমার কাছে অবান্তর।
পরবর্তী বিশ্বকাপেও ব্যাট হাতে
দেখা যাবে কি না মহেন্দ্র সিং ধোনিকে
কিংবা আগামী অর্থবর্ষে নরেন্দ্র মোদী
আর ক’টা বিদেশ সফরে গিয়ে
তুলে ধরবেন দেশের গৌরব
সে প্রশ্নেও আমি চূড়ান্ত উদাসীন।
বাজারে ফসফেট কিনতে গিয়ে আশরীর ছ্যাঁকা খেল যে দেহাতি চাষী,
আমাকে ভাবিত করে
দু’পুরের ঠা ঠা রোদে
ইস্পাতের ফলার মত ঝলসে ওঠা
তার পিঠের ঘামবিন্দুর সমানুপাতে
ফসল ওঠা-না-ওঠার সম্ভাবনা।
নির্জন নদীর কিনারে দু’হাতের তালুতে মাথা রেখে শুয়ে
অপলক আকাশ দেখে যাচ্ছে যে-সব অভাগা রূপম,
আর তাদের বিক্ষত বুকের থেকে
সুগন্ধি রুমাল তুলে নিয়ে নদী পেরিয়ে নিরুদ্বেগ চলে যাচ্ছে
আর-কোন-পিছুটান-না-রাখা বরুণারা,
আগামী দশ বছরেও কোন খয়েরি খামের আকস্মিক সংবাদে তাদের চোখের পলক জুড়োবে কি না
সেই প্রশ্ন আমাকে কুরে কুরে খায়।
টিউশন ফেরত মেয়েকে নিয়ে আসতে স্টেশনের পথে উদ্বিগ্ন হেঁটে যাচ্ছে যে বুড়ো বাপ,
আমাকে চিন্তায় ফ্যালে
একুশটা অন্ধকার গলি, সতেরোটা বন্ধ কারখানা, পাঁচ-পাঁচটা নির্মীয়মাণ বহুতল ডিঙিয়ে
অক্ষত তাদের ঘরে ফেরা।
অবারিত মাঠ জুড়ে দোর্দন্ড ফুটবল খেলে নিয়ে
যেসব দামাল ছেলের দল
বেপরোয়া ঝাঁপিয়ে পড়ে পুকুরের জলে,
আমাকে আহত করে
মাঠপুকুরের আয়তন ক্রমশ ছোট-হয়ে-যেতে-দেখা
ওদের আনত চোখের দৃষ্টি।
রাহুল গান্ধী বিয়ে না করলেও
দেশের সামগ্রিক লিঙ্গ অনুপাতে
বিন্দুমাত্র তারতম্য ঘটবে না,
মমতা ব্যানার্জী নোবেল না পেলে
কিছুমাত্র ক্ষতি হবে না বাংলাসাহিত্যের,
ধোনির খেলা না খেলায় কিংবা
নরেন্দ্র মোদীর আরও ৩৩টা বিদেশ সফরে
আমূল বদলে যাবে না দেশের অর্থচিত্র;
কিন্তু
দেহাতি চাষীর দু’বেলা ভাত না জুটলে,
বুড়ো বাপ তার মেয়েকে নিয়ে নিরাপদ বাড়ি না ফেরে যদি,
বিষণ্ণ শুয়ে থাকা রূপমদের চোখের উপরে
যদি না ঝরে পড়ে কাঙ্ক্ষিত খয়েরি খাম,
নির্বিকার বেদখল হয়ে গেলে ছেলেদের মাঠপুকুর
বিক্ষুব্ধ একদিন জ্বলে উঠবেই উঠবে সমস্ত রাস্তাঘাট—
এই সুনিশ্চিত অশনিসংকেত
আমাকে সারারাত নির্ঘুম জাগিয়ে রাখে।
XXXXXXXXXXXXXXXXXXXXXXX