তোমার তর্জনী ও আমার কম্পাস
কিশোর মজুমদার
তোমার কাছে আমার একটা
জিনিস রয়ে গেছে
তোমার কাছে আমার প্রিয় বিকেল রয়ে গেছে,
যে বিকেলে আমি হাফপ্যান্ট এর খুশি ভরে রাখতাম ।
তোমার তর্জনী থেকে আমি খুলে নিতে চেয়েছি আমার কম্পাস
আমি খুব দ্রুত বড় হতে গিয়ে,
খুব তাড়াহুড়ো করে জীবনকে সাজাতে গিয়ে
সকল খুশিগুলোকে কবরে পাঠিয়েছি ।
কবরে মানে ইমারাতের তলায় আমার স্বপ্ন অর্থ পরিশ্রম সব দিয়েছি।
আজ খুশিগুলোকে পাই নি কংক্রিটের দেয়ালে
কোথাও নিজেকে খুঁজে পাচ্ছি না আজ, কোথাও না
শুধু তুমি আমার ছেলেবেলার গল্প শুনতে চাও বলে
আমি তোমার কাছে খুব শিশু হয়ে উঠতে পারি
আমি আমার নির্জন ঘুঘুর দুপুর তোমাকে দেখাতে পারি
আমার গোল্লাছুটের মাঠে তোমাকে নিয়ে যেতে পারি ।
তুমি তর্জনী তুলে আমাকে আমার বিকেলে ফিরিয়ে নিতে চেয়েছো
সবকিছু ফুরিয়ে যাবার আগেই ।
আজ তোমার কাছে গচ্ছিত রাখা আমার শৈশব মুখর ক্লান্তিহীন জীবন ।
তুমি ভিড়ের কাছে ভোরকে বিকিয়ে দাও নি বলে
আমি আমার শিশির সকাল তোমার কাছেই রেখে যাচ্ছি ।
এখনো যদি ক্লান্ত না হই
এখনো যদি খুব দীর্ঘশ্বাসের চাপা কান্না শুনতে না পাই
যদি হিসেবের খাতা খুলে সুখ বিলাস মাপতে না ভুলে যাই
তাহলে কবে আমি সত্যিকারের বড় হবো বলতে পারো ?
আমি জীবনের কাছে দু হাত পেতে
ভিক্ষে চাইছি–
না
আমার ছেলেবেলা নয়
আমার ছেলেবেলার সেই খুশিগুলো
যা আজও তোমার কাছে অনাবিল
সুখের হাতছানি দেয় ।
তুমি সেই আমিটাকে গ্রহণ করো
ফিরিয়ে দাও
যা খুশি করো
শুধু আমার গল্পগুলো রেখে দিয়ে যাও আমার বিছানার পাশে
তোমার অস্ফুট ঠোঁটের কাছে খুব যত্নে খুশিগুলো ফুটিয়ে তুলো রোজ
একটু একটু করে……
যেমন করে নীরব রাত এসে তারাদের গুছিয়ে দিতে থাকে সারারাত ধরে । তোমার গল্প শুনতে শুনতে আমি ঘুমিয়ে পড়তে চাই এবার।